পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী

ইদানীং স্মার্ট ফোন ও ট্যাবলেট কে ছোটখাটো পকেট কম্পিউটার বলা যায়। কিন্তু এই সব বহুমুখী ব্যবহারের কারণে সাধারণত স্মার্ট ফোনের ব্যাটারি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। অগত্যা নতুন প্রযুক্তির ব্যাটারি না আসা পর্যন্ত আমাদের পাওয়ার ব্যাংক (ব্যাটারি ব্যাংক) ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় নিচের বিষয় খেয়াল রাখা ভালঃ

১। ক্যাপাসিটি ও বহনযোগ্যতা

পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় প্রথমেই যে বিষয়ে নজর দিতে হবে সেটা হল পাওয়ার ব্যাংকের ক্যাপাসিটি, যেটা সাধারণত মিলি এম্পেয়ার আওয়ার(mAh) এ বলা থাকে। আপনার স্মার্ট ফোনের ক্যাপাসিটি ও মিলি এম্পেয়ার আওয়ার(mAh) এ দেয়া থাকে। এখন আপনার ফোনের ব্যাটারিটি ২৫০০ mAh হয় এবং আপনার একটি ৫০০০ mAh ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার ব্যাংক থাকে তাহলে স্বাভাবিক ভাবে মনে হতে পারে পাওয়ার ব্যাংকটি দিয়ে আপনার ফোনটি দুইবার ফুল চার্জ দেয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে ভোল্টেজ এর রুপান্তর এবং সার্কিটের কর্মদক্ষতার কারণে প্রকৃত আউটপুট কম হয়। কারণ পাওয়ার ব্যাংক এর ভেতরে যে ব্যাটারি থাকে সেটা সাধারণত ৩.৭ ভোল্ট এর হয় কিন্তু ফোন চার্জ হয় ৫.০ ভোল্ট এ, ফলে ভোল্টেজ ৩.৭ ভোল্ট থেকে ৫ ভোল্ট এ রুপান্তর করতে অনেকটা শক্তি ব্যয় হয়ে যায় এবং একটি ভালো মানের পাওয়ার ব্যাংক সর্বোচ্চ ৯৩% পর্যন্ত কর্মদক্ষতার সাথে ভোল্টেজের রুপান্তর করতে পারে।

প্রকৃত আউটপুট (সর্বোচ্চ) = (৩.৭ × পাওয়ার ব্যাংকের ক্যাপাসিটি × কর্মদক্ষতা)/৫

উদাহরণস্বরূপ ভালো মানের একটি ১০০০০ মিলি এম্পেয়ার আওয়ার(mAh) পাওয়ার ব্যাংক এর প্রকৃত আউটপুট (সর্বোচ্চ) হবে = (৩.৭×১০০০০×০.৯৩)/৫ = ৬৮৮২ মিলি এম্পেয়ার আওয়ার(mAh)।

সহজভাবে বলা যায় যে, পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় ন্যূনতম আপনার ফোনের ব্যাটারির দিগুণ ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংক কেনা উচিত। আপনি আপনার স্মার্ট ফোনটিকে কয়েকবার চার্জ দিতে চাইলে আরো বেশি ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংক কিনতে পারেন কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, ক্যাপাসিটির সাথে সাথে পাওয়ার ব্যাংকের সাইজ, ওজন ও দাম বাড়তে থাকবে এবং সহজে নিয়ে ঘুরাফেরা করা যাবে না।

২। পাওয়ার ব্যাংকের আউটপুট কারেন্টঃ

পাওয়ার ব্যাংকের আউটপুট কারেন্ট সাধারণত ১ থেকে ২ এম্পেয়ার হয়ে থাকে। আপানর ফোন/ ট্যাবলেট টি যদি ১ এম্পেয়ার থেকে বেশি কারেন্টে চার্জ নিতে পারে তাহলে ১ এম্পেয়ার অউটপুট দিতে পারে এমন পাওয়ার ব্যাংক আপনার ফোন/ট্যাবলেটটিকে অনেক ধীরে চার্জ দিবে। এখন অধিকাংশ এন্ড্রয়েড স্মার্ট ফোন ও ট্যাবলেট ১.৫ থেকে ২.০ আম্পেয়ারে চার্জ নিতে পারে। তাই পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় ২ এম্পেয়ার অউটপুট দিতে পারে এমন পাওয়ার ব্যাংক কেনাই ভালো। আপনার ফোন/ট্যাবলেট ১ এম্পেয়ার চার্জ নিতে না পারলেও ২ এম্পেয়ার অউটপুট দিতে পারে এমন পাওয়ার ব্যাংক নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন কারণ ভালো মানের পাওয়ার ব্যাংক আপনার ক্ষমতা অনুযায়ী আম্পেরারে চার্জ দিবে।

৩। পাওয়ার ব্যাংকের ইনপুট কারেন্টঃ

পাওয়ার ব্যাংকটি চার্জ দিতে কত সময় লাগবে সেটা না ভেবেই আমরা অনেকেই বড় ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাংক সহজেই কিনে ফেলি। ক্যাপাসিটি যত বেশি হবে পাওয়ার ব্যাংকটি ফুল চার্জ দিতে তত বেশি সময় লাগবে। সাধারণত পাওয়ার ব্যাংক ১ থেকে ২ এম্পেয়ার কারেন্টে এ চার্জ নিতে পারে। ভালো মানের পাওয়ার ব্যাংক সাধারণত ২ এম্পেয়ার কারেন্টে চার্জ নিতে পারে, যা কিনা তুলনামূলক কম এম্পেয়ার নিতে পারে এমন পাওয়ার ব্যাংক থেকে দ্রুত চার্জ হবে। যেমন একটি ভালো মানের ১০০০০ মিলি এম্পেয়ার আওয়ার(mAh) পাওয়ার ব্যাংক ৫.৫ ঘণ্টায় ফুল চার্জ হয়ে যাবে। এখন একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, পাওয়ার ব্যাংকটি ২ এম্পেয়ার চার্জ দিতে হলে আপনাকে অবশ্যই ২ এম্পেয়ার আউটপুটের ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করতে হবে।

 

৪। আউটপুট পোর্টের সংখ্যাঃ

আউটপুট পোর্ট যদি একাধিক থাকে তাহলে সহজেই আপনি আপনার পাশে থাকা প্রিয় মানুষটির সাথে পাওয়ার ব্যাংকটি শেয়ার করতে পারবেন। তাই একাধিক আউটপুট পোর্ট সংখ্যা বিশিষ্ট পাওয়ার ব্যাংক কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৫। ব্যাটারি টাইপঃ

বাজারে প্রচলিত পাওয়ার ব্যাংকগুলোর ব্যাটারী সাধারনত দুই প্রকার হয়। ১) লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ২) লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারী। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি সাধারনত একটু ভারী এবং বড় আকৃতির হয়ে থাকে, অন্যদিকে, লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি অনেকটা হালকা পাতলা হয়ে থাকে। লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারিযুক্ত পাওয়ার ব্যাংক এর দাম একটু বেশি হলেও সহজে বহনযোগ্য।

৬। দাম ও গুনগত মানঃ

পাওয়ার ব্যাংক কেনার ক্ষেত্রে দামকে প্রাধান্য না দিয়ে গুনগতমানকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। বাজারে অনেক কম মূল্যে আকর্ষণীয় মোড়কে নিম্নমানের পন্য পাওয়া যায়, তাই পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় কোয়ালিটি এবং অরিজিনাল ব্র্যান্ডের পন্য নিশ্চিত হয়ে কেনা উচিত।

৭। ওয়ারেন্টিঃ

কোন পণ্যের গুনগত মান কেমন তা বেঝার জন্য অন্যতম সূচক হচ্ছে ওয়ারেন্টি। বাজারে যে সকল পাওয়ার ব্যাংক পাওয়া যায় তার বেশির ভাগেরই কোন অথোরাইজড ওয়ারেন্টি নেই। অন্যদিকে অরিজিনাল ব্র্যান্ডেড প্রডাক্টকে সাধারনত ১ থেকে ১২ মাসের ওয়ারেন্টি প্রদান করা হয়। তাই পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি এবং ওয়ারেন্টি পলিসি দেখে কেনা উচিত।